সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে একটি পশুর হাটের ইজারা প থেকে বঞ্চিত হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ছাত্রআন্দোলনের সমন্বয়কসহ দুজনকে কুপিয়ে জখম করেছেন ছাত্রদল নেতারা। রবিরবার রাত ৯ টায় উপজেলার বোগলাবাজারে এই ঘটনা ঘটে।

আহত আবু সালেহ নাসিম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেটের বিভাগের অন্যতম সমন্বয়ক। অপর আহত ফয়সল জামান সংগঠনের জেলা কমিটির প্রথম যুগ্ম আহবায়ক। বোগলাবাজার নামের ওই হাটের ইজারা পেয়েছেন তিনি। নাসিম ও ফয়সলের বাড়ি ওই এলাকায়। তারা দুজন পরস্পর আত্মীয়।

খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ভারতীয় চোরাই গরু নামার রুট হিসেবে পরিচিত পাওয়ার পর সীমান্তবর্তী বোগলাবাজারের ইজারামূল্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েকগুন বেড়ে যায়। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কাছে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক খাতে পরিণত হয় এটি।

জানা যায়, পট পরিবর্তনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের জেলা কমিটির প্রথম যুগ্ম আহবায়ক ফয়সল জামান নিজ মালিকানাধীন ফয়সল এগ্রো ফার্মের নামে সাড়ে ৩ কোটি টাকা দিয়ে বাজারটি ইজারা নেন। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে কিছু শেয়ার বিক্রি করে দেন তিনি ৷ এদের মধ্যে বিগত আমলের চিহ্নিত সুবিধাভোগী ও চোরকারবারি হিসেবে পরিচিত রফিক খানও রয়েছেন৷

জানা যায়, বাজারটি ইজারা পাইয়ে তাকে সহযোগিতা করেন তার আত্মীয় সমন্বয়ক আবু সালেহ নাসিম। এদিকে, বাজারটি ইজারা নিতে চেয়েছিলেন স্থানীয় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা। ফয়সল বাজারের ইজারা পাওয়ার পর ইজারা-বঞ্চিত ছাত্রদলের ওইসব নেতারা নাসিম-ফয়সলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা  ছাত্রদলের সদস্য জহিরুল ইসলাম সানি, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নাজমুল হোসেন, ছাত্রদল নেতা মুহিত হাসান, হানিফ, বুলু প্রমুখ৷ এ নিয়ে নাসিম-ফয়সলের সঙ্গে বিরোধের জড়ান তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাকবিতণ্ডা হয়।

সূত্র আরও জানায়, রবিবার রাত ৯ টার দিকে নাসিম ও ফয়সল মোটরসাইকেলে করে সিলেট থেকে বোগলাবাজারে এসে বাজারের গলিতে দাঁড়িয়ে পরিচিতদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছিলেন। এ সময় সানি-নাজমুলের নেতৃত্বে চার-পাঁচটি মোটরসাইকেলে করে এসে প্রায় ১০ জন যুবক নাসিম ও ফয়সালকে এলোপাতাড়ি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপাতে ও লাঠি-হকিস্টিক দিয়ে পেটাতে থাকেন। এতে দুজনই গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়দের বাধার মুখে পিছু হটেন হামলাকারীরা। আহত দুজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

এদিকে, কুপের আঘাতে কেটে যাওয়ার সমন্বয়ক নাসিমের মাথায় ৫টি ও ফয়সলের মাথায় দুটি সেলাই করতে হয়েছে। তাদের দুজনের হাত ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন চিকিৎসকরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সালেহ নাসিম বলেন, তারা আমাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। এর সাথে পূর্বের কিছু ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে তারা ফেসবুকে আমাকে দেখে নেওয়ার প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছিলেন। এই হুমকির পর আমাদের ওপর হামলা হয়েছে৷

তিনি বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে যে গোষ্ঠী কাজ করে যাচ্ছে, এই হামলা তারই অংশ। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় আমরা আইনকে হাতে তুলে নিতে চাই না ৷ বিষয়টি আইনানুগভাবে মোকাবেলা করব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের জেলা কমিটি প্রথম যুগ্ম আহবায়ক ফয়সল জামান বলেন, তারা আমাদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে ও মানহানি করতে একের পর এক অপপ্রচার চালাচ্ছিলেন৷ পরে আমাদের মেরে আহত করেছেন।

তিনি বলেন, ইজারাদারী তার পারিবারিক ব্যবসা। নিয়ম মেনে সরকারকে রাজস্ব দিয়ে তিনি বাজার ইজারা এনেছেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে তার কোনো বিরোধ থাকার কথা না৷ জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানান ফয়সল জামান।

দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, পূর্ববিরোধের জেরে এই হামলা হয়েছে ৷ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।