১৬ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ সকাল ৯:১৩
সংবাদ শিরোনাম

দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শ্রেষ্ঠ ৩ জন অদম্য নারীর সাফল্য অর্জনের গল্প

আকাশ বাংলা ডেস্ক
  • আপডেট মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • ৮০ বার পঠিত

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ৩ ক্যাটাগরিতে সাফল্য অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ ৩ জন অদম্য নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক কার্যালয় দক্ষিণ সুরমা উপজেলার উদ্যোগে ‘অদম্য নারী’-২০২৪ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান গত ৯ ডিসেম্বর সোমবার সকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতি দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঊর্মি রায় ও সঞ্চালক উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খাদিজা খাতুন উপজেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ ৩ অদম্য নারী অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী কান্দিয়ার চরের মোছাঃ শিল্পি বেগম, শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী তিরাশিগাঁওয়ের মোছাঃ জোছনা বেগম, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী বিবিদইল গ্রামের মোছাঃ হাসনা আক্তার-কে সম্মাননা ও পুরস্কার প্রদান করেন।
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী মোছাঃ শিল্পি বেগম। উপজেলার মোগলাবাজার ইউনিয়নের কান্দিয়ারচর গ্রামের মোঃ কাওছর আহমদের স্ত্রী মোছাঃ শিল্পি বেগম দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অর্থের অভাবে বেশি পড়ালেখা করতে পারেননি। তার স্বামী ছিলেন দিনমজুর। স্বামী যা উপার্জন করতেন তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর ছিল। সংসারের এই অভাব অনটন দেখে তিনি নিজে কিছু করার চিন্তা করে বাড়িতে বসে হাঁস-মুরগী পালন ও নকশী কাঁথার কাজ শুরু করেন। এতে সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসে। পরে শিল্পি বেগম উপজেলা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। এখন তার চারটি পুকুরে প্রচুর মাছ আছে। পুকুরের মাছ বিক্রি করে শিল্পি বেগম মাসে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা আয় করেন। আয়ের টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। বড় মেয়েকে এইচ.টি থেকে ডিপ্লোমা (রেডিওলজি) পাশ করেছে। বর্তমানে সে ইতালী প্রবাসী। বড় ছেলে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে এগ্রিকালচারে ডিপ্লোমা পাশ করে। বর্তমানে সে কানাডা প্রবাসী। ছোট ছেলে দক্ষিণ সুরমা কলেজে ডিগ্রিতে অধ্যায়নরত।
দরিদ্র পরিবার থেকে নিজের চেষ্টায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে মোছাঃ শিল্পি বেগম উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ অদ্যম নারী।
শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী অদম্য নারী মোছাঃ জোছনা বেগম। তিনি দাউদপুর ইউনিয়নের তিরাসিগাঁওয়ের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মোঃ ওয়াহিদ উল্লাহ’র মেয়ে। পিতা দিনমজুর ও মাতা ছিলেন গৃহিণী। ৭ সদস্যের পরিবার পিতার আয়ে সংসার চালানো খুব কষ্টদায়ক ছিল। তাই জোছনা বেগম লেখাপড়ার পাশাপাশি অনেক কষ্ট ও পরিশ্রম করে মাছ চাষ, সবজি চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন করে যে আয় করতেন তা দিয়ে তাদের সংসার, ভাই-বোনের ও নিজের লেখাপড়ার খরচ এবং বাবা-মায়ের চিকিৎসা খরচও চালাতেন। তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার পরামর্শে পরিবার পরিকল্পনা অফিস এফপিএভি-তে সুপারভাইজার পদে খন্ডকালিন চাকুরি করেন।
জোছনা বেগম সমাজের দ্ঃুস্থ মহিলাদের নিয়ে একটি মহিলা সমিতি করেছেন। ৪০ জন সদস্য বিশিষ্ট সমিতিটি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নিবন্ধন প্রাপ্ত। এর মাধ্যমে তিনি সমাজে বাল্যবিবাহ, যৌতুক, নারী নির্যাতন রোধে বিভিন্ন সভা সেমিনার উঠান বৈঠক করে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ছোট ভাইয়ের লেখাপড়া শেষ হওয়ায় তাকে তিনি একটি কাপড়ের দোকান করে দেন।
জোছনা বেগম এমসি কলেজ সিলেট থেকে সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকপদে চাকুরি হয় কিন্তু নিয়োগপত্র দেরীতে আসায় তিনি আর যোগদান করেননি। পরে দাউদপুর ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে তার চাকুরি হয়, বর্তমানে সেখানেই তিনি কর্মরত।
দারিদ্রতা উপেক্ষা করে থেমে না গিয়ে সমাজে উদাহরণ সৃষ্টি করায় শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী ক্যাটাগরিতে মোছাঃ জোছনা বেগম শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী।
সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী মোছাঃ হাসনা আক্তার লালাবাজার ইউনিয়নের বিবিদইল গ্রামের দিনমজুর মোঃ লিলু মিয়া স্ত্রী। তিনি ৫ সন্তানের জননী। স্বামী রুজিরোজগার ভালো না থাকায় সন্তানদের নিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে, অনাহারে অর্ধাহারে তিনি দিন কাটাচ্ছিলেন। সেই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে স্বাবলম্বী হতে চেষ্টা করেন। সেই লক্ষ্যে হাসনা আক্তার বিভিন্ন এনজিও এর মাধ্যমে গর্ভবতী সেবা প্রশিক্ষণ নিয়ে মহিলাদের স্বাস্থ্য উন্নয়নে পরিসেবা দিয়ে পরিবারের কিছুটা অভাব দূর করেন। তিনি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ ও কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। তিনি প্রত্যেক্ষভাবে ২০-২৫টি বাল্য বিয়ে বন্ধ করেন। যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি এই সামাজিক ব্যাধির প্রসার যাতে না ঘটে সেজন্য সচেতনতামূলক সভা সেমিনার করে যাচ্ছেন।
হাসনা আক্তারের বাড়িতে প্রতিষ্ঠি সেলাই প্রশিক্ষণ সেন্টারে অসহায় দুস্থ মহিলারা বিনামূল্যে সেলাই, ব্লক, বাটিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ব্যক্তিগত তাহবিল থেকে করোনাকালীন ও বন্যার সময় ত্রাণ সহায়তা প্রদান, মহিলাদের ভাতা প্রাপ্তিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা সহ সমাজ সচেতনতামূলক বহু উঠান বৈঠক, সভা সেমিনার করেন। জনসংখ্যা নিরোধে তিনি পরিবার পরিকল্পনায় মানুষকে সচেতন করার জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় হাসনা আক্তার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার পদে ৫ বার নির্বাচিত হন। তিনি সর্বশেষ ২ বার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
উপরোক্ত কাজগুলোর মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ হাসনা বেগম উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী সম্মাননা লাভ করেছেন।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খাদিজা খাতুন বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে তৃণমূলের সংগ্রামী নারীদের উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছর জীবনযুদ্ধে জয়ী নারীদের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ‘অদম্য নারী অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কার্যক্রমের ধরাবাহিকতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ৩ জন অদম্য নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। আগামীতেও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী সম্মাননা প্রদান অব্যাহত থাকবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2025 AkashBangla. Developed by PAPRHIHOST
Theme Dwonload From Ashraftech.Com
ThemesBazar-Jowfhowo