শাহনুর সুলতান
একটি বিশ্ববিদ্যালয় জেলা শহরের এমন স্থানে হওয়া উচিত যেখানে এটি সহজে প্রবেশযোগ্য এবং শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জন্যও সুবিধাজনক হয়। এর জন্য কিছু যৌক্তিক ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা যেতে পারে :
১) পরিবহন ব্যবস্থা:
ইট, পাথর আর যন্ত্রের যন্ত্রণাময় একটি জেলা শহরের একদম কেন্দ্রস্থলে আপনি কারাগারও রাখবেন না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বশ্রেষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,,,,,,,, ভাবা যায়!
একটি বিশ্ববিদ্যালয় জেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাটের কাছাকাছি হওয়া উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা সহজে যাতায়াত করতে পারে। আমি বলছিনা যে জেলা শহরের কাছাকাছি হতে হবে । একটি জেলার বহু উপজেলা থাকে। সবগুলো না হোক। অন্তত; অধিকাংশ উপজেলার যাতায়াত ব্যবস্থা বাস ও ট্রেন এবং অন্যান্য যোগাযোগের সুবিধা কথা ভাবলেই আপাতত এই যুক্তিটাই যথেষ্ট বলে মনে করছি।
২) পর্যাপ্ত জমি:
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন, লাইব্রেরি, গবেষণাগার, খেলার মাঠ এবং আবাসিক হল নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রশাসনিক ভবনের পাশাপাশি আরও নানান ভবন প্রয়োজন। জেলা শহর কেন্দ্রীক এরজন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এই বিষয়টা আমাদের এই প্রজন্ম না ভাবলে, পরের প্রজন্ম আমাদের অভিশাপ দিবে।
৩) নিরাপত্তা ও শান্ত পরিবেশ:
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশের পরিবেশ শিক্ষার জন্য উপযোগী এবং নিরাপদ হওয়া প্রয়োজন।
জনবহুল এলাকা থেকে একটু দূরে, প্রকৃতিপূর্ণ, কোলাহল মুক্ত বিশাল বিস্তৃতিপূর্ণ একটি এলাকা নির্বাচন করতে না পারাটা জেলা বাসীর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। এই কলংক না লাগুক।
৪) সুবিধাসমূহের প্রাপ্যতা:
ক্যাম্পাসের কাছাকাছি খাবার, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা থাকা উচিত। কাছাকাছি মেডিক্যাল, ফায়ার স্টেশন, থানা, উপজেলা সহ সার্বিক ব্যবস্থা আছে এমন এলাকা বাছাই করুন। আগামী শতবর্ষী প্রজন্মের সাথে আমরা এমন অবিচার কখনো করতে পারিনা।
৫) শিক্ষা বান্ধব ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
শান্তিগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের বৃহৎ হাওর অঞ্চলগুলোর একটি অংশ। এখানকার হাওরগুলো বর্ষার সময় মনোরম সৌন্দর্য তৈরি করে এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তাই এই এলাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য হবে প্রথম পছন্দ এবং এটি শিক্ষার্জনের জন্য যথাযত উপযোগী।
৬) নদী ও জলপথ:
সুরমা নদী এ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত, যা পরিবহন ও ঋতুভেদে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী/ কর্তৃপক্ষ সবার জন্য যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
৭) ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য:
শান্তিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় মেলা, বৈশাখী উৎসব এবং হাওরকেন্দ্রিক সংস্কৃতি লক্ষণীয়। যা শিক্ষা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।
৮) শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়ন:
শান্তিগঞ্জে নতুন অবকাঠামো, রাস্তা, ব্রিজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের কারণে এটি ক্রমাগত উন্নয়নশীল।
৯) কেন্দ্রীয় অবস্থান ও যাতায়াত সুবিধা:
শান্তিগঞ্জ সুনামগঞ্জ জেলার কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি অবস্থিত, যা জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে সহজে যাতায়াতযোগ্য। এটি সুনামগঞ্জ শহর থেকে তুলনামূলকভাবে কম যানজটপূর্ণ এবং প্রধান সড়কগুলোর মাধ্যমে সংযুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয় শহরের বাইরে স্থাপন করলে শহরের উপর চাপ কমবে এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াত আরও সহজ হবে।
১০) প্রাকৃতিক পরিবেশ:
শান্তিগঞ্জের হাওরকেন্দ্রিক প্রাকৃতিক পরিবেশ শিক্ষার জন্য একটি শান্ত ও মনোরম পরিবেশ তৈরি করবে।শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার সুযোগ পাবে।
১১) জমির প্রাপ্যতা ও কম খরচ:
শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পর্যাপ্ত খালি জমি রয়েছে যা তুলনামূলকভাবে কম খরচে অধিগ্রহণ করা সম্ভব।
দীর্ঘমেয়াদে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের জন্যও এটি সুবিধাজনক।
১২) আঞ্চলিক উন্নয়ন:
একটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের ফলে পুরো জেলার শিক্ষা, ব্যবসা, আবাসন, ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
জেলাবাসীর কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হবে।
১৩) অতিরিক্ত সুবিধা:
শহরের যানজট, দূষণ ও জনসংখ্যার চাপ এড়িয়ে শান্তিগঞ্জে একটি সুপরিকল্পিত ক্যাম্পাস তৈরি করা যাবে।
এটি স্থানীয় ও আঞ্চলিক শিক্ষার্থীদের জন্য সহজলভ্য হয়ে উঠবে এবং গ্রামীণ শিক্ষার হার বাড়াতে সহায়ক হবে।
১৪) ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের সুযোগ:
শান্তিগঞ্জের খোলা জায়গা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার, আবাসিক হল, এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে পর্যাপ্ত সুযোগ প্রদান করবে।
সারমর্ম:
শান্তিগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবন নির্মাণ করলে এটি কেবল শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করবে না, বরং সুনামগঞ্জ জেলার সমগ্র উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এগুলো মাথায় রেখে, একটি বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত শহরের প্রান্ত থেকে একটু দূরের খোলামেলা এলাকায় স্থাপন করা হয়, যেখানে দীর্ঘমেয়াদে সম্প্রসারণের সুযোগ থাকে।
এসব নানামুখি যুক্তি আছে শান্তিগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন দাবী নিয়ে।
কেবলমাত্র একটি প্রতিহিংসাই গোটা জেলা বাসীর স্বপ্নকে নষ্ট করতে পারেনা। জেলার জনগণ প্রয়োজনে পদক্ষেপ নিতে পারে।