মোহাম্মদ শিশির মনির (Mohammad Shishir Manir) বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের (Advocate of Supreme Court of Bangladesh) একজন বিজ্ঞ আইনজীবি। আইন পেশার উন্নয়ন ও গবেষণায় তিনি অনবদ্য ভূমিকা রাখছেন। সাধারণ জনগণকে আইনী সেবা প্রদান ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিককালে জনগুরুত্বপুর্ণ চাঞ্চল্যকর কয়েকটি বিষয়ে আইনী লড়াইয়ে তিনি সাফল্যের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। সম্প্রতি সিলেট সফরে আসলে জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম আকাশ বাংলা ডটকমে তিনি এক সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন আকাশ বাংলা ডটকম’র নির্বাহী সম্পাদক সাংবাদিক আবদুল কাদির জীবন। পড়ন্ত এক বিকেলে প্রতিবেদকের সাথে তাঁর কী কথা হয়েছিল তা নিম্নে তুলে ধরা হল :
আবদুল কাদির জীবন : আসসালামু আলাইকুম। ভাই, আপনি কেমন আছেন?
শিশির মনির : ওয়ালাইকুম সালাম। ভালো আছি।
আবদুল কাদির জীবন : অনলাইন নিউজ পোর্টাল আকাশ বাংলার র পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন।
শিশির মনির : অনেক ধন্যবাদ।
আবদুল কাদির জীবন : আপনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন বিজ্ঞ আইনজীবি। আপনি অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইনীভাবে লড়ছেন। আমরা লক্ষ করছি আপনার চেম্বার থেকে মানে Law LAb থেকে আইন ও আইনের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন কোন ইস্যুতে কাজ করছেন। দয়া করে বলবেন?
শিশির মনির : আমি এখন পাঁচটি ইস্যু নিয়ে কাজ করছি। তার মধ্যে একটা হলো-১. মানি লন্ডারিং (Money Laundering) এন্ড এন্টি করাপশন (Anti-corruption) ২. মেডিক্যাল লেগনিজেন্স অর্থাৎ ডাক্তার এবং রোগীর যে Relationship বা সম্পর্ক সেটা ৩. পুলিশ যে ক্রাইম করে সেই ক্রাইমের যে ইন্ডিপেনডেন্ট ইলেকশন কমিটি গঠন করা হয় ৪. প্রবেশন (Probation) নিয়ে অর্থাৎ জেলে না পাঠিয়ে বাইরে রেখেও যেভাবে সংশোধন করা যায় ৫. এ যাবত কালে বাংলাদেশে করাপশনের উপর পত্রিকায় যত রিপোর্ট করেছে বা আর্টিকেল প্রকাশ হয়েছে এসব কম্বাইন্ড ইভ্যুলেশন (C0mbind Evaluation) করে যেনো ২০২১ সালে আমরা আদালতে উপস্থাপন করতে পারি।
আবদুল কাদির জীবন : সচরাচর আইনজীবিরা আইন নিয়ে গবেষণার চেয়ে আইন ব্যবসা কেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এ বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখেন এবং আপনি আইনপেশা নিয়ে কেন গবেষণা করছেন?
শিশির মনির : আমি মনে করি আইন ব্যবসা, আইন পেশার সামান্যতম একটা অংশ। আইন পেশার বিস্তৃতি অনেক গভীর এবং অনেক বেশি। আইনজীবিদের বলা হয় সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ার (Social Engineer)। এই সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ শুধুমাত্র টাকা ইনকাম করা কোন purpose হতে পারে না। সমাজের পরিবর্তন ও সংস্কার সাধনে আইনজীবিদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। এই জন্য আমি Law Lab প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছি। এটাতে আমরা আইনী সেবা দেয়ার পাশাপাশি গবেষণাধর্মী কাজও করছি। যেনো সমাজের পরিবর্তন আসে। সংস্কার হয় এবং জনগণ সুফল পায়।
আবদুল কাদির জীবন : ইদানিংকালে আপনি বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর মামলায় লড়াই করেছেন। বিশেষ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দী নিয়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তদের খালাস। আসলে আদালতকে সঠিকভাবে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে ন্যায় ও সুবিচার মিলে। এক্ষেত্রে আইনজীবিদের ভুমিকা কি। এখানে মামলা পরিচালনা করতে ভুক্তভোগীদের কোন ত্রুটি বিচ্যুতি কি আছে? আপনি কি মনে করেন?
শিশির মনির : আমি মনে করি, আইনজীবি এবং বিচারক ইনসেপারেবল টুইন (Inseparable Twins) । একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। দুটি যমজ বাচ্চা যেমন একটা আরেকটার সঙ্গে নাভী দিয়ে লেগে থাকে ঠিক তেমনি আইনজীবি এবং বিচারক একইভাবে লেগে থাকে। যদি আইনজীবিরা বলিষ্ঠ ভুমিকা না রেখে তাহলে বিচারকার্য (Judicial Proceedings) ভালো হবে না। আইনজীবিরা যদি ভালো ভুমিকা রাখেন তাহলে অবশ্যই বিচারকগণ ভালো করবেন। এই জন্য এই বিচার কাজ বাস্থবায়ন করার জন্য যতো যোগ্যতা সম্পন্ন আইনজীবি দরকার সেই সকল আইনজীবি নিয়োগ করতে হবে। অন্যথায়, বিচারকার্য সম্পন্ন হবে না বা কোন ব্যক্তির পক্ষেই তা সম্ভব নয়।
আবদুল কাদির জীবন : কিছুদিন পূর্বে বার কাউন্সিলের পরীক্ষা নিয়ে যে একটা গন্ডগোল সৃষ্টি হয়েছিল আপনি একজন আইনজীবি হিসেবে এর প্রতিক্রিয়ায় কী বলবেন?
শিশির মনির : আমি মনে করি, বার কাউন্সিলের (Bar Council) পরীক্ষা কঠিন হয়েছে এই মর্মে যারা গন্ডগোল করেছে তাদের আইনজীবি হওয়ার কোন যোগ্যতা নেই। তবে কাউন্সিলকে প্রতিবছর পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পরীক্ষা যত কঠিন হোক না কেন। বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে কোন গাফলতি প্রকাশ করতে পারবেনা। প্রতি বছরের পরীক্ষা প্রতিবছর নিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে বার কাউন্সিলের বিরুদ্ধে। সেখানে বলা আছে তারা যেনো প্রতিবছরের পরীক্ষা প্রতিবছর নেয়। কিন্তু বার কাউন্সিল সেটা মানে না। এখানে বার কাউন্সিলের দোষ। যে সমস্ত ছাত্ররা বা শিক্ষানবিশরা পরীক্ষা না দিয়ে সনদ পেতে চান তারা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আবার বার কাউন্সিল যেনো প্রতিবছর পরীক্ষার আয়োজন করে সেটারও ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
আবদুল কাদির জীবন : আপনি ভবিষ্যতে আপনার এলাকায় ততা সুনামগঞ্জে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহন করে রাজনীতির মুলধারায় প্রবেশের কোন পরিকল্পনা আছে কি?
শিশির মনির : দেখুন আইনজীবীর মূল কাজ হলো – আইন পেশার উন্নয়ন ও সংস্কার করা। আমি একজন আইনজীবি হিসেবে এখন যা করছি এটি আমি ইলেকশন করলাম বা করলাম না তার উপর নির্ভর করে না। একজন আইনজীবী তার আমৃত্যু এই কাজ করতে হবে। এটা তার প্রফেশন। এটা পেশা এবং পেশা। কিন্তু নির্বাচন বা Election আমাদের দেশে একটা খন্ডকালীন ব্যাপার। পাঁচ বছরের জন্য কেউ যদি Elected হয় আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কোন ব্যক্তির পক্ষেই এককভাবে অনেক কাজ করা সম্ভব নয়। সেই জন্যই আমি মনে করি, আইন পেশায় থেকে আমি আমার নিজেকে সর্বশেষ পয়েন্ট পর্যন্ত সংস্কারের কাজ করে যাবো। সংস্কারের উদ্দেশ্যে আমার প্রতিষ্ঠান Law Lab নিয়ে কাজ করবো এবং আরো অনেক আইনজীবি নিয়ে এই কাজ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।
আর বাংলাদেশের নির্বাচনের কথা যদি বলেন, তাহলে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তো নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এই ভঙ্গুর নির্বাচন ব্যবস্থায় অবশ্যই আপাতত এই ধরণের কোন উদ্যোগ অর্থবহ হবে বলে আমি মনে করি না । তবে দেশে যদি সত্যিকারের Democratic Politics’ আসে এবং সাধারণ জনগণ যদি Democratic Candidate কে ভোট দিতে পারে ও দেয়ার পরিবেশ আসে তখন সেটি বিবেচনা করে দেখা যাবে। আপাতত নয়।
আবদুল কাদির জীবন : আপনার জন্ম দিরাই উপজেলায়। আপনার এলাকার উন্নতি বা অগ্রগতি নিয়ে আপনার কোন পরিকল্পনা আছে কি?
শিশির মনির : আমি একটি কাজ এখনো করি, তখনো করবো, এবং আমৃত্যু করে যাবো। এই সুনামগঞ্জে বাড়ি, সিলেটে বাড়ি কেউ যদি আমার কাছে কখনো আসে আইনি কোন পরামর্শ নিতে অথবা মতামতের জন্য, সহোযোগিতার জন্য। আমি চেষ্টা করবো কোন ধরণের ফি না নিয়ে বিনা পয়সায় সাহায্য করতে। আমি চেষ্টা করি যাদের আইনি পরামর্শ দরকার তারা যেনো বিনা পয়সায় আইনি পরামর্শ পায়। এটা যেহেতু আমার এখতিয়ারের মধ্যে আছে যার জন্য আমি এটা করতে পারবো এবং করে যাবো। এর বাহিরে বাকি যে উন্নয়ন হয় সেটা রাষ্ট্রীয় ফান্ড নিয়ে করতে হয়। ব্যক্তিগতভাবে টাকা দিয়ে কেউ তো আর এতো বড় বড় উন্নয়ন করতে পারবে না।
আবদুল কাদির জীবন : ‘নানীর করা চুরির মামলায় বাবা-মা কারাগারে। নিম্ন আদালতে ঘুরেও জামিন হয়নি। বাবা মাকে কাছে না পেয়ে একপর্যায়ে আদালতেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। ৩ বছর ও ২ বছরের দুই শিশু। যেটি এক হৃদয় বিদারক ঘটনা…।’
এই মামলায় আপনার সাথে বিচারকের কথোপকথন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এই বিষয়ে আপনার কাছ থেকে জানতে চাই, আসলে সেদিন কী ঘটেছিল?
শিশির মনির : এক মা তার মেয়ের Husband এর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। যার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সে মহিলার দুটি বাচ্চা ছিল। তারা ছিল অল্প বয়সের। তিন বছর এবং দুই বছরের সন্তান। তাদেরকে নিম্ন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট বেইল (Bail) দেয়নি। মাকে বেইল দেয়নি। তখন আমি হাইকোর্টের কাছে বেইলের আবেদন করেছিলাম যে, এই সামান্য একটা অভিযোগে মাকে জেলে নেয়ার তো কোন অর্থ হয় না। তার দুটি বাচ্চা আছে। দেখাশোনা করার বিষয় আছে। আমি ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে বললাম, মাকে বেইল দেন তখন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বেইলে সাইন করলেন এবং মা বের হয়ে গেলেন। ব্যাপারটা ছিলো মা মামলা করেছে মেয়ের Husband এর উপর। ব্যাপারটা একটু Sensitive। কারণ, মা ই হলো বাদি মামলার। এ জন্য নিম্ন আদালত মাকে বেইল না দিয়ে তাকে জেলে পাঠিয়েছে। আমি মনে করেছি যে, বাচ্চাদের যে কান্নাকাটি এবং মায়াকান্না এটা সহ্য করার মতো না। সেই জন্য হাইকোর্টের নজরে আনলে পরে হাইকোর্ট তাদের সাথে সাথে বেইল দেয়। এটা মানবিকতার ব্যাপার। সবকিছুতে তো আইনের ব্যাপার থাকে না। অনেককিছু Humanitarian Consideration থাকে। এই Humanitarian Consideration is much important than that only better of law.
আবদুল কাদির জীবন : তরুণ আইনজীবী যারা নতুন আইন পেশায় আসতে চায় তাদের কি করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
শিশির মনির : আমি মনে করি তরুণ আইনজীবীদের প্রথম কাজ হলো পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। তাদেরকে হাজার হাজার পৃষ্টা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। লক্ষ লক্ষ পৃষ্টা পড়ার ধৈর্য্য অবলম্বন করতে হবে। তরুণ আইনজীবীদের শুরুতে টাকা আয়ের পেছনে ঘুরার প্রয়োজন নেই। জ্ঞানের পেছনে নজর দিতে হবে। সময় আসবে টাকা ইনকাম করার। টাকা একদিন পেছনে ঘুরবে। এই যে কাজটুকু তারা করতে চায়না। তারা চায় শর্টকাট মেথডে আইনজীবী হয়ে যেতে। চায় হঠাৎ পরিচিত হয়ে যেতে । এটা সঠিক নয়। তরুণ আইনজীবী যদি ধৈর্য্যশীল হয়, সঠিক আইন জানে তাহলে সে সফল হবে এবং অল্প বয়সে সাইন করতে পারবে। তা না হলে তারা যদি তাড়াহুড়া করে, তাহলে তারা হয়তো কিছু পেয়ে যাবে কিন্তু সেটা বেশিদিন ঠিকবেনা, মানের হবে না, সম্মানের হবে না। সেটা slow and steady হবে না। প্রসেস অবলম্বন করতে হবে।
আবদুল কাদির জীবন : একজন আইনজীবী হিসেবে আপনার অনেক সুনাম রয়েছে স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে। আপনি একজন সফল আইনজীবী। আপনার এ সফলতা কিভাবে এসেছে বা কোন কাজটি করার কারনে আপনার সফলতা এসেছে বলে মনে করেন?
শিশির মনির : আমি মনে করি, শুরু থেকে আমি খুব চিন্তা করতাম কিছু টাকা কিভাবে ইনকাম করবো? একটা মামলা করলে মক্কেল কিছু পয়সা দেয়। পয়সাটা খরচ হয়ে যাবে। কত মানুষ পয়সা দেয়। এভাবে দশজন, বিশজন, পঞ্চাশজন, একশতজন টাকা দেয়। এতো টাকা নিয়ে আমি কি করবো? কত টাকা আমার দরকার? এই পয়সার পিছনে যদি আমি ঘুরি তাহলে কোন সংস্কারের কাজতো আমি করতে পারবোনা। কোন Reform এর কাজ তো আমি করতে পারবো না। কোন দূর্বলতায় হাত দিয়ে তো আমি সংশোধন করতে পারবো না। তাহলে অর্থ কি মানুষের জীবনে দরকার আছেনা? আছে, সেটি কি আনলিমিটেড দরকার? সেটি কি অঢেল দরকার? এই অঢেলের পেছনে আমি এখনো তাকাইনি। কোনদিন তাকাবোও না।
আমি মনে করি, যে অঢেলের পেছনে তাকাবেনা, উদ্দেশ্যের পেছনে তাকাবে, তার সামনে অনেক কিছু করার আছে। সে যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক। এই দল মত নির্বিশেষে আইন পেশায় কতগুলো কমন বিষয় আছে এই কমন বিষয়গুলো নিয়ে যদি কাজ করে তাহলে নিশ্চিতভাবে সে সমাজে সম্মান পাবে, উপকার পাবে। লিগ্যাল ব্যবস্থার সংস্কার হবে। ভবিষ্যতে একদিন আসবে যেখানে ন্যায়বিচার কায়েম হওয়ার পথ সুগম হবে। সবকিছু শুরুতেই হয়ে যাবেনা কিন্তু চেষ্টা করতে করতে একদিন হয়ে যাবে। তাই আমার ধারণা হয়তো purpose work হয়তো অনেকে পছন্দ করেন। আমার দশ বছর আইন পেশায় আমার মনে হয় আমি কারো কাছে বলিনি যে, আমাকে এত টাকা দিতে হবে? এটা আমার কাছে কোন একটা মুখ্য বিষয় বলে মনে হয়না। এরকমও মামলা লড়েছি আমি, একজন মানুষ আমাকে ফোন করে বলেছে পত্রিকায় একটা রিপোর্ট আসছে, দেখেন। ঐ রিপোর্টটা পড়ে সাথে সাথে ডিশিসন নিয়ে আদালতে হাজির হই। আমি বলেছি It’s problem এটা সমাধান করেন। আদালত বলছে নথি নিয়ে আসেন। আমি নিজে হেটে নারায়ণগঞ্জ থেকে নথি নিয়ে এসেছি। নথি নিয়ে এসে আদালতকে দেখিয়েছি যে, এই দেখেন This is the problem, you can take initiative. than the court takes initiative. কোন কাজ করতে গেলে spirit লাগে। এটা অর্জন করুক সবাই। এটা আমি আশা করি।
আবদুল কাদির জীবন : আমি আপনার একটি সফলতার গল্প শুনতে চাই।
শিশির মনির : আমার সফলতার একটি গল্প হলো- আমি একটা মামলা করেছিলাম। ফরিদপুরের একটা উঁচু জাতের হিন্দু মেয়ের সাথে নিচু জাতের হিন্দু ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছিল। সে ছেলেটা মেথর যাকে বলে হরিজন সম্প্রদায়। একজন ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মেয়েকে নিয়ে একজন হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলে পালিয়ে যায় এবং তারা বিয়ে করে। কিন্তুমেয়ের বাবা-মা এই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। তারা গিয়ে মামলা করে যে, আমার মেয়েকে অপহরন করে নিয়ে গেছে। Then আমার সাথে একজন লোক পরিচয় করিয়ে দেয়। আমি তার সাথে যোগাযোগ করি। তারা আমার চেম্বারে এসে কথা বলে। আমি আদালতের নজরে এনে একটা নথি আপিল ফাইল করি। আপিল ফাইল করেই প্রথম তুলেছিলাম, উঁচু এবং নিচু জাতের ভেদাভেদ আজও থাকবে কি না? প্রথম আমি মনে করেছিলাম, মামলায় হেরে যাবো, দোদুল্যমান ছিলাম। শেষ পর্যন্ত জজ সাহেব এটাতে রাজি হলেন। ছেলেটা এবং মেয়েটার বিয়ে allow করলেন। তারা ঘর-সংসার শুরু করলো। তাদের বাচ্চা হলো। বাচ্চার বয়স দুই বছর। মাঝে মাঝে আমার সাথে ফোনালাপে কথা হয়। তাদের একটা আত্বীয় বাজারে মাছ বিক্রেতা। একদিন বাজার করতে গেছি তখন সেই লোকটা আমাকে স্যার স্যার বলে ডাকতে শুরু করল। ডেকে বলছে, স্যার আমি অমুকের আত্মীয়, অমুকের আত্মীয়। তার মানে ঐ যে হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলেটা, তার আত্মীয়। একজন আইনজীবী হিসেবে জীবনে এর চেয়ে আর কি সফলতা থাকতে পারে? It is a satisfaction of law.
আবদুল কাদির জীবন : আপনার দশ বছর আইনপেশায় কোন ব্যার্থতার গল্প আছে কি?
শিশির মনির : আমাকে খুব পীড়া দিয়েছে সুনামগঞ্জের একটি মামলা। একটা মামলা হয়েছিল আমার এলাকা দিরাই থানায়। মামলাটি ছিল মার্ডার কেইস (Murder Case)। মামলাটা তারা অভিযোগ করেছে যে, তাদেরকে মেরে ফেলেছে। এগারো দিন পরে লোকটি হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেয়ে গেছে। রিলিজ পাওয়ার পর সাতদিন পরে লোকটি মারা গেছে। টোটাল মিলে ৭-১১ দিন মোট ১৮ দিন পরে মারা গেছে। ডাক্তারের যে মেডিকেল রিপোর্ট সেখানে ন্যাচারাল ডেথ। সাক্ষীরা বলছে, না তারা মারছে। এই কথা বলে সুনামগঞ্জ জেলা কোর্টে তার চার্জ ফ্রেইম (Charge Frame) করেছে। আমি চার্জ থেকে একটা মামলা ফ্রেইম করে আদালতে গিয়ে বললাম, এই আদেশটাকে বাতিল করতে হবে। এই একটা বিষয় নিয়ে কোর্টে সতেরো দিন শুনানী হয়েছে। সতেরো দিনের মাথায় জজ সাহেব আমাকে বললেন, Mister Manir, we are sorry. we are going to next issues. আপনি অন্য কোর্টে চেষ্টা করেন। আমি খুব ব্যথিত হয়েছিলাম। এই ব্যাথায় আমি চেম্বারে চলে যাই এবং পরবর্তী দুই দিন কোর্টে আসিনি। This is the failure of the story
আবদুল কাদির জীবন : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাই।
শিশির মনির : ভবিষ্যতে পরিকল্পনা হলো-আমি এই দেশের কনসেপ্টে একটি বিরাট ল ফার্ম (Law Firm) গড়ে তুলতে চাই। আমি চাই আমার ফার্মে ১০০ আইনজীবী কাজ করুক, গবেষণা করুক, আইন বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠুক। এখানে এমন একটা কর্মজজ্ঞ গড়ে তুলতে হবে যেখানে ১০০-২০০ আইনজীবী কাজ করবে। দিনরাত সেখানে পরিশ্রম করবে। আইনের বিশাল বিশাল complex গুলো নিয়ে কাজ হবে, গবেষণা হবে। মানুষ আসবে, সল্যুশন (Solution) হবে। সরকার রাষ্ট্রে যেই থাকুক না কেন আইনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষন হবে। এটা দেখে মরতে পারলেই আমার হবে।
আবদুল কাদির জীবন : আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ডেইলি সিএন বাংলা‘র পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
শিশির মনির : তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ।