কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ এই উপমহাদেশের সাহিত্য সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঐতিহ্যের একটি অনন্য বিদ্যাপীঠ
Politics of the key to the nation
Library is the mother of university.
…দেওয়ান এ এইচ মাহমুদ রাজা চৌধুরী
আব্দুল কাদির জীবন : আপনি কেমন আছেন ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
আব্দুল কাদির জীবন : কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ(কেমুসাস)’র ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে চাই।
দেওয়ান এ এইচ মাহমুদ রাজা চৌধুরী : ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফি দরবেশ শেখ কুনিয়াত মুজাররদ হযরত শাহজালাল (র.), হযরত শাহপরান (র.) সহ ৩৬০ জন অলি আউলিয়া এবং শ্রী চৈতন্য ও অসংখ্য জ্ঞানীগুণীর পূণ্যভূমি, আধ্যাত্মিক নগরি, দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট তথা বাংলাদেশের প্রায় ১০০ বছরের পুরনো সাহিত্যের প্রতিষ্ঠান ও শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ(কেমুসাস) এই উপমহাদেশের সাহিত্য সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঐতিহ্যের একটি অনন্য বিদ্যাপীঠ। কেমুসাসের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও পাঠাগার আন্দোলনের প্রতিকৃত দরগাহ হযরত শাহজালাল (র.) মাজার শরীফের মোতাওয়াল্লি এ জেড আব্দুল্লাহর দানকৃত ১৯টি বই নিয়ে পাঠাগার যাত্রা শুরু করে। ১৯৩৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে কেমুসাস তার নিজস্ব অর্থায়নে ভালোভাবে পরিচালিত হয়ে এবং প্রাচীনতম সাহিত্য পত্রিকা আল ইসলাহ, প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মনীষি মোহাম্মদ নুরুল হক অথবা জ্ঞান তাপস মো: নুরুল হকের দানকৃত আল ইসলাহ পত্রিকা সংসদের মুখপত্র হিসেবে এখনো চলমান যাহার মধ্যে সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্য ফুটে উঠে।
আব্দুল কাদির জীবন : কেমুসাসের বর্তমান অবস্থা কী ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : অতীতে যেমন ভালো ছিল বর্তমানেও ভালো আছে। ঐতিহ্যের প্রতি সূচালো দৃষ্টি রেখে তার নিজস্ব কর্মক্লান্ড পরিচালিত হচ্ছে এবং পরিচালিত হবে। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যৎ যোগপুযোগী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আব্দুল কাদির জীবন : প্রতিষ্ঠান নিয়ে আপনি অথবা আপনার পরিবার সংসদ ভবিষ্যতের জন্য কি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : প্রতিষ্ঠানটি প্রতিটি ক্ষেত্রে সময় উপযোগি পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। সমাজের প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ, উপনিবেশ যুগ এবং আধুনিক যুগ। তাই চারটি ধাপের সমাজ ব্যবস্থা মধ্যে উপনিবেশ যুগের যেহেতু প্রতিষ্ঠা বা সৃষ্টি হয়েছে সেহেতু সেই যুগের সৃষ্টিশীল প্রতিষ্ঠান গ্রন্থ সংগ্রহ ব্যাপারে প্রাচিন যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত সব ধরনের গ্রন্থ সংগ্রহ করে আসছে। আধুনিক যুগ পরিক্রমায় তত্ত¡ প্রযুক্তির বিশ্বায়নে সংসদ প্রাঙ্গন থেকে সিলেটের লেখক সমাজ যে স্লোগানটি বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করেছিল সেটি হলো আগামী শতকের বিশ্ব হবে ‘তত্ত বিপ্লবের বিশ্ব’। ইনফরমেশন টেকনোলজি, সেই দিকে সংসদ ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছে। ইনফরম্যাশান টেকনোলজির যুগে সংসদটির ওয়েবসাইট প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। ভবিষ্যতে গ্রন্থাগারটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
আব্দুল কাদির জীবন : কেমুসাস সম্পর্কে অনেকের ধারণা এটা জামাত পন্থি, এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ত হওয়ার অধিকার সব নাগরিকের রয়েছে। সে দৃষ্টি কোন থেকে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় বাংলাদেশের বিভিন্ন নাগরিক এই প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আছেন। সমুদ্রে যেভাবে সব ধরনের মাছ থাকে ঠিক তদ্রæপ সামাজিক প্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন আদর্শের মানুষ এই পতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটা স্বাভাবিক এবং মৌলিক অধিকার। বিভিন্ন দৃষ্টি কোনের ব্যক্তি যদি কোন প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্তি না হয়ে একটি আদর্শের গোষ্ঠিকে বেশি সম্পৃক্ত থাকে বলে মনে করেন সেটা সমুচিন না। সেই দৃষ্টি কোন থেকে আমি মনে করি এই প্রতিষ্ঠানটি একক আদর্শ গোষ্টি দ্বারা পরিচালিত নয়।
আব্দুল কাদির জীবন : সম্প্রতি কেমুসাস’র নির্বাচন নিয়ে অনেকে বিরুপ মন্তব্য করেছেন, তার কারণ কি ? এবং পরবর্তি নির্বাচন কি সংবিধান অনুযায়ী হবে ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : কেমুসাস সৃষ্টি থেকে এখন পর্যন্ত একটা সাংবিধানিক তার নিজস্ব গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলমান। যেখানে সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদের ক থেকে ই পর্যন্ত নির্বাচন প্রসঙ্গে বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই আলোকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। সেখানে পুর্ণাঙ্গ অথবা একক প্রার্থী বিভিন্ন পদে অংশ গ্রহণ করে। অনেক সময় ভোটাভোটির প্রত্যক্ষ ভোটে কার্যকরি পরিষদ নির্বাচিত হয়। অথবা সবাই মিলে একটি প্যানেল নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয় তখন আর ভোটের প্রয়োজন পরে না। সেই ক্ষেত্রে নির্বাচন নিয়ে অনেকের বিরুপ মন্তব্য করেন যেটা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি না। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে।
আব্দুল কাদির জীবন : এই প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক হওয়া বড় একটি অর্জন। ছোটবেলা আপনি কি স্বপ্ন দেখেছিলেন ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : স্বপ্ন মানুষের জীবনের একটি মুল্যবান দিক। তাই স্বপ্ন নিয়ে মানুষ বেছে থাকে। ভবিষ্যতের মানুষের স্বপ্ন এবং কল্পনা মানব জীবনকে প্রফুল্ল করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে সহযোগিতা করে। তবে যে যে ক্ষেত্রে চিন্তা শক্তির উদ্ভব ঘটায় সে ক্ষেত্রে অবিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছার চেষ্টা করে। এটাই স্বাভাবিক। কেউ সফল হতে পারে কেউ পারে না।
আব্দুল কাদির জীবন : আপনার সফলতার গল্প শুনতে চাই ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : মানববসতির স্বপ্ন ও কল্পনার কর্মসৃষ্টি চিন্তা নিয়েই জীবিত আছে। সেই ক্ষেত্রে অনেকে অনেক ক্ষেত্রে সফল হয় আবার হয় না। আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছি, অনেক ক্ষেত্রে পারিনি। আমার সফলতার বিভিন্ন দিকের মধ্যে রাজনীতি এবং সাহিত্যঙ্গনে সফলতা অর্জন করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের বিশ্বাসী। বিধায় শহীদ প্রেসিডেন্ট মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান এর জাতীয়তাবাদী দলের সিলেট মহানগরের তৃতীয় অঙ্গ সংগঠন জাসাসের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও জাসাসের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, বর্তমানে মহানগর বিএনপি সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। অন্যদিকে সাহিত্য ও সংস্কৃত প্রেক্ষাপটে কেমুসাস এর সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব আছি।
Politics of the key to the nation অর্থাৎ রাজনীতি হলো জাতির চাবি, আর সাহিত্য ও সংস্কৃতি হলো জীবন বিপ্লবের হাতিয়ার। এই দুইটা দিক থেকে আমি যতটুকু সম্মান পেয়েছি অন্য ক্ষেত্রে সেটা পাইনি। সে জন্য আমি সিলেটবাসির প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
আব্দুল কাদির জীবন : ব্যর্থ হয়েছিলেন এমন একটি স্মৃতি বলুন ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়েই জীবন। একটি অপরটির সম্পুরক। ব্যর্থ হয়েছি বলেই আজ মহান আল্লাহতায়ালা আমাকে কিছুটা হলেও সফলতা দিয়েছেন।
আব্দুল কাদির জীবন : এমন একটা কাজ বলুন যেটা আপনি সবসময় করতে চান এবং এমন একটা কাজ বলুন যেটা কখনো করতে চান না ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : রাব্বুল আলামীন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রগতিশীল কিতাব কোরানে উল্লেখ করেছেন, ‘আমি সারা পৃথিবীকে রহমতের চাঁদর দ্বারা ঢেকে রেখেছি-(সেটাই প্রেম, সেটাই দর্শন (চযরষড়ংড়ঢ়যু) কখন কাকে কতটুকু রহমত দিবো সেটা আমি জানি। আমি যখন যাকে যতটুকু রহমত দিব সেটা আমার রহমত বা প্রেম তার মধ্যে বহি:প্রকাশ ঘটবে’। এখানে প্রেমের চাদরের নিচে যা কিছু রয়েছে সেটা হলো মানবতা, ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি। আমি সেই প্রেমের বিশ্বাসী এবং সেটাই অনুধাবন করার চেষ্টা করছি যাহা রাব্বুল আলামিন জানেন। প্রেম, ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। আমি এই কামনাই করতে চাই।
আল্লাহ পৃথিবীর প্রতিটি মানব সন্তানকে খেলাফতের দায়িত্ব অর্পন করেছেন যেখানে মানবের প্রেমের সার্বজনিনতা নেই সেটার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নই।
আব্দুল কাদির জীবন : কোন কাজটি আপনাকে সবসময় প্রেরণা দেয় ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : সামাজিক দায়বদ্ধতা আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রেরণা দেয়। মানবের জীবন বোধকে জাগ্রত করতে হলে, অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত জানা আবশ্যক।
আব্দুল কাদির জীবন : আপনি কি করতে পছন্দ করেন ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : বই পড়া এবং ভ্রমন করা আমার পছন্দের বিষয়।
আব্দুল কাদির জীবন : কোন কাজটি আপনি করতে পছন্দ করেন না ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : মানবতা বিরোধী কোন কাজ করতে আমি পছন্দ করি না।
আব্দুল কাদির জীবন : বর্তমান সাহিত্য সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : সাহিত্য মানুষের মূল্যবোধের চাবিকাঠি। সাহিত্য চর্চায় বর্তমানে আমরা যেটুকু দেখি বা অনুভব করি সেক্ষেত্রে সাহিত্য চর্চার মন-মানসিকতা দিন দিন কমে যাচ্ছে যা সংখ্যার দিক থেকে নগন্য। আগেকার দিনে বা অতীতে ঘরে ঘরে কম বেশি পাঠাগারে গড়ে তোলার চিত্র ছিল বা বই সংগ্রহের একটি চেষ্টা ছিল। বই পড়া বা সংগ্রহে রাখার জন্য আগেকার দিনে খুবই বেশি ছিল। বর্তমানে সেই ড্রয়িং রুম হয়ে গেছে টিভির ডিসের ব্যবহার বা ডিসের রুম।
আব্দুল কাদির জীবন : প্রিয় লেখক কে ? তার কোন লেখাটি আপনার পছন্দ ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : সৈয়দ মুজতবা আলী তার লেখালেখির বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে ইতিহাস বিষয়ক লেখাগুলো আমার পছন্দ।
আব্দুল কাদির জীবন : কোন বইটি আপনি সবসময় পড়তে চান ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : ইতিহাস ভিত্তিক বই আমি সবসময় পড়তে চাই।
আব্দুল কাদির জীবন : তরুন লেখকদের উদ্যেশ্যে আপনি কোন বক্তব্যটি দিতে চান ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : তরুণরা যেটুকু সাহিত্য চর্চা করছে, সেটুকু আশাব্যঞ্জক না। যেখানে পৃথিবী সৃষ্টি থেকে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতি-কভাবে স্বীকৃত সমৃদ্ধ ভাষা আরবি, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি ইত্যাদি ভাষার মধ্যে বিভিন্ন যুগে সাহিত্য-সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি মত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে যে ভাষাগুলা সর্বোচ্চ আসন বা অবস্থায় গ্রহণ করেছিল বর্তমানে তরুনরা বিভিন্ন ভাষা ভিত্তিক প্রেক্ষাপটে সমাজের সংস্কৃতি যে বিকাশ হয়েছে সেখান থেকে খুরাক সংগ্রহ করার বর্তমান প্রজন্মের এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত নগন্য। যার জন্য মেধাভিত্তির বিকাশের পন্থা বা পথ কমে যাচ্ছে। বর্তমান তরুণ বা তথ্য প্রযুক্তির বিশ্বায়নে প্রযুক্তির কু-ফল অর্থাৎ ফেইসবুক, ইউটিউব, হয়ার্টআপ ইত্যাদি যেটা মানব জাতির কাম, ক্রোধ, লোভ, মাসচর্য এবং মোহ এই পাঁচটি বিষয় সবসময় মানুষকে খারাপের দিকে ধাবিত করে। যার দরুন প্রযুক্তির সুফল থেকে কুফল বেশি হয়। লাইব্রেরি ভিত্তিক বই পড়ার মনমানসিকতা বা অভ্যাস তা একেবারে ক্ষীণ হয়ে গেছে।
আব্দুল কাদির জীবন : আপনার প্রিয় কবি কে ? তার কোন কবিতাটি আপনার ভালো লাগে ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বিদ্রোহী কবিতা।
আব্দুল কাদির জীবন : আপনার পছন্দের গান কোনটি ? শাহ আব্দুল করিমের কোন গানটি আপনার ভালো লাগে?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : মরমি কবি হাছন রাজার ‘ঘর বাড়ী আমার নয় আমিতো সেই ঘরের মালিক নই’। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ‘স্বচক্ষে দেখিলাম সখা বিলাতে’ (লেখক সম্মেলন স্মারক ১৯৯৭, লেখক পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত)।
আব্দুল কাদির জীবন : বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আপনার মতামত ও মূল্যায়ন জানতে চাই ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : আমি পূর্বেই বলেছি যে, রাজনীতি হলো জাতির চাবি। সেটা হলো যারা রাজনীতি করে জনগনের সেবার মন মানসিকতা নিয়েই সামনের দিকে অগ্রসর হয়। জনগনের মেন্ডেট নিয়ে জনগনের বক্তব্য একাধিক ব্যক্তির নেতৃত্বে সমাজ নির্মানে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। তবে বর্তমান বিশ্বায়ণে আমরা দেখতে পাই রাজনীতি নেতৃত্ব বেশি অংশ পুজিবাদী ও আমলাতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার দাবিত হচ্ছে। এতেই প্রতিয়মান হয় বেশি অংশ পাবলিক প্রতিনিধিত্ব যারা করছেন তারা রাজনীতিবীদ না হয়ে রাজনীতিজিবি হয়ে গেছেন। সেক্ষেত্রে জনগনের উন্নয়নের মুখে প্রতিরোধ সমাজ ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে।
আব্দুল কাদির জীবন : আপনার দৃষ্টিতে মানব সন্তান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কী ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : রাব্বুল আলামিন মানব জাতি সৃষ্টি থেকে প্রতিটা মানুষকে খেলাফতির দায়িত্ব দিয়েছেন তবে সেক্ষেত্রে কেউ সেই দায়ীত্ব উপস্থাপন করতে পারে কেউ পারে না।
আব্দুল কাদির জীবন : সুস্থ-সংস্কৃতি চর্চা তরুণ সমাজের করণীয় সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : যেহেতু সংস্কৃতি স্বীয় কৃতকর্মের বহি:প্রকাশ, তাই আমরা সেই কৃতকর্ম সমাজ বিনির্মানে সুন্দর, সুচালো ভাবে উপস্থাপন করা যায় যেখানে মানব কল্যানের অগ্রনী ভূমিকা পালন করে।
আব্দুল কাদির জীবন : আপনার লেখালেখি সম্পর্কে জানতে চাই। আপনার প্রথম কবিতা কোনটি ?
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : নিবন্ধ, প্রবন্ধ, কবিতা আমি লিখেছি। যে লেখাগুলো স্থানীয় জাতীয় ও আল ইসলাহর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ‘আমি’ কবিতাটি আমার পছন্দের। দু একটি লাইন বলছি-
“আমি আমি বলি সবে
আমাতে নাই সার
যার আছে সবই আছে
সব যে কেবল তার”
আব্দুল কাদির জীবন : পাঠাগার ‘প্রেরণার বাতিঘর’ আপনার মুল্যায়ন
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : Library is the mother of university. গ্রন্থাকার কোন জাতি উত্থানের মুখপত্র হলো পাঠাগার এবং যাদুঘর (মিউজিয়াম)। কোন জাতিকে ধ্বংস করার জন্য একটাই পথ সেটা হলো পাঠাগার বা যাদুঘর ধ্বংস করে দেয়া। সমাজ বিনির্মানের একটা আদর্শ স্বরুপ। সেখানে থেকে আলো ছড়ায়। আমরা সেখান থেকে প্রতিনিয়ত আলো পাই। এটি প্রেরণার বাতিঘর।
আব্দুল কাদির জীবন : আমাকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী : তোমাকেও ধন্যবাদ।
আধ্যাত্মিক ভাবধারা তথা ইসলামী তাহজীব তামাদ্দুনকে কবিতায় প্রতিস্থাপিত করে যে ক’জন সম্ভাবনাময় তরুণ রেনেসাঁ আন্দোলনে আত্মানিয়োগ করেন তাঁদের মধ্যে দেওয়ান এ এইচ মাহমুদ রাজা চৌধুরী অন্যতম। কবিতায় আধ্যাত্মিক ব্যঞ্জনা সৃষ্টি তাঁর নান্দনিক বৈশিষ্ট্য। তাঁর জন্ম ১৯৬৯ সালের ৩ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারা বাজার থানাধীন পানাইল (দোহালিয়া) গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে। পিতা-দেওয়ান মুফিদ রাজা চৌধুরী ও মাতা-সৈয়দা ছইফা খাতুন। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশ। শিক্ষাজীবনে তিনি এল.এল.বি পাশ করেন। বহুল আলোচিত সিলেটের শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ বিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন একজন অগ্রসৈনিক।
সিলেট মোবাইল পাঠাগারের সদস্য সচিব ও সিলেট লেখক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। তাছাড়া সিলেট মেট্রোপলিটন ল’কলেজ ও মেট্রোপলিটন কিন্ডার গার্টেন-এর উদ্যোক্তা সদস্য। তিনি জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)-এর সিলেট মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি। জাতীয় নির্বাহী কমিটির (জাসাস) সদস্য, মহানগর বিএনপির বর্তমান সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক। তাড়াছা মাসিক পত্রিকা পবন সম্পাদনা করেছেন এবং লেখক সম্মিলন’৯৭ স্মারক-এর অন্যতম সম্পাদক। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের দুই-দুইবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও প্রাচীনতম সাহিত্য পত্রিকা আল-ইসলাহ’র প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ (কেমুসাস)-এর সার্বিক বিষয় সম্পর্কে জানতে প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সংগঠক দেওয়ান এ এইচ মাহমুদ রাজা চৌধুরীর সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ইংরেজি ম্যাগাজিন দ্য আর্থ অব অটোগ্রাফ সম্পাদক আব্দুল কাদির জীবন।